Header Ads

বিধানসভায় উপাধ্যক্ষ পদে মনোনীত কৃপানাথ মাল্লা



আভ্যন্তরীণ জল পরিবহন বিভাগের কোনও পরিকাঠামো নেই ও ভগবানের ভরসায় বিভাগটি চলছে বলে মন্তব্য করেন স্বয়ং পরিবহন মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি

অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটি
বরাক উপত্যকার কাছাড় জেলার একজন জনপ্রতিনিধিকে কেবিনেট মন্ত্ৰীর মর্যাদা দিয়ে স্বীকৃতি জানানোর পর এবার করিমগঞ্জ জেলার চা জনগোষ্ঠী বসতিপ্রধান অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি কৃপানাথ মাল্লাকে বিধানসভার মর্যাদাপূর্ণ উপাধ্যক্ষ পদে বসালো রাজ্য সরকারবুধবার বিধানসভায় অধ্যক্ষ হিতেন্দ্রনাথ গোস্বামী ৬জন বিধায়কের প্রস্তাব ও সমর্থনের ভিত্তিতে মাল্লাকে সর্বসম্মতভাবে উপাধ্যক্ষ পদে মনোনীত করার কথা ঘোষণা করেন। কংগ্রেস, এআইইউডিএফ, অগপসহ কোনও দলই মাল্লার বিরোধিতা করেনি। অধ্যক্ষ গোস্বামী তাঁকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করার পর মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল মাল্লাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বরাকের রাতাবাড়ির মতো পশ্চাদপদ এলাকা থেকে তিনি কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এসে সংসদীয় রাজনীতির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। আগামী দিনে তিনি সদনের মর্যাদা রক্ষা করার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল আশা ব্যক্ত করেন। কংগ্রেসের পক্ষে বিধানপরিষদীয় দলের উপনেতা রকিবুল হুসেইন বলেন, আমরাই তাঁকে প্রথম রাতাবাড়ি উপ-নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়া করিয়েছিলাম। রাতাবাড়ি নির্বাচন কেন্দ্রের সঙ্গে আমাদের এক আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রেখে সক্রিয় বৈশিষ্ট বজায় রাখবেন বলে হুসেইন আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে উপাধ্যক্ষকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। অগপর পক্ষে সভাপতি তথা মন্ত্রী অতুল বরা বলেন, তিনবারের বিধায়ক মাল্লা তাঁর বিভিন্ন অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে বিধানসভায় নিরপেক্ষতা বজায় রেখে চলবেন বলে সবার আশা। মিত্রজোটের প্ৰতি যথোচিত মর্যাদা রক্ষা করবেন বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন। এআইইউডিএফের হাফিজ বসির আহমদ বলেন, মাল্লার মতো তিনবারের বিধায়ক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিধানসভাকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করবেন। বিপিএফের প্রমিলা রাণী ব্ৰহ্ম বলেন, কৃপানাথ অত্যন্ত সহজ-সরল ব্যক্তি। তাঁর সরলতাকে আমরা শ্রদ্ধা করি৷ বরাকে রাজনীতিতে চা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আছে। বিজেপি সভাপতি তথা বিধায়ক রঞ্জিত কুমার দাস বলেন, মাল্লা বরাকে তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে এসেছেন। পঞ্চায়েত পর্যায় থেকে উঠে আসা তিনিই হবেন প্রথম ব্যক্তি। মুখ্যমন্ত্রী বারবার বরাক ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সম্প্ৰীতির কথা বলেন। মন্ত্রীসভার সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বরাককে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দিয়েছেন। বরাকে বার বার যান মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল। শুধু মুখে নয়, কাজের ক্ষেত্রে বরাককে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী। মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি বরাকের আরও একজনকে পেয়ে। মাল্লা অত্যন্ত শান্ত-শিষ্ঠ ও ভদ্রলোক বলে মন্তব্য করেন তিনি। বিধানসভার পবিত্ৰতা রক্ষা করে মাল্লা কাজ করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কংগ্রেসের রেকিবুদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা মাল্লাকে নিয়ে গর্বিত। কেননা তিনি আমাদের ঘরানায় প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন। বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, ২০০৩ সালে তিনি একজন ছাত্র নেতা ছিলেন। জন্মে নয়, কর্মেই মানুষের পরিচয়। অনেক চেষ্টা করে তাঁকে আমরা কংগ্রেস দল থেকে জয়ী করিয়েছিলাম। অধ্যক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তিনি নিরপেক্ষতা ও শিষ্ঠাচার বজায় রেখেছেন। আমরা কৃপানাথকে মন্ত্রীপদে চেয়েছিলাম। উপাধ্যক্ষ হয়েও তিনি অনেক কাজ কতে পাবেন। তিনি অনুযোগ করেন, কংগ্রেসের প্রাক্তন উপাধ্যক্ষল রথীন সেনের ফ্রেমে বাঁধানো ছবি বিধানসভার উপাধ্যক্ষ কার্যালয় থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তা পুনরায় লাগানোর দাবি জানান কমলাক্ষ। বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালা বরাকের সহজ-সরল তথা ভদ্র ব্যক্তি মাল্লা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। গুণজ্যোতি দাস, রূপজ্যোতি কুর্মি, ভূবন পেগু প্রমুখ মাল্লাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য পেশ করেন। উপাধ্যক্ষ পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একশ ছাব্বিশজন বিধায়কে সমর্থন লাভ করে মনোনীত হওয়ায় সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানান মাল্লানিরপেক্ষভাবে বিধানসভার পবিত্ৰতা রক্ষা করে কাজ করার অঙ্গীকার করেন তিনি।
এদিকে এদিন বিধানসভায় শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ ভট্টাচাৰ্যর অনুপস্থিতিতে মন্ত্রী পল্লব লোচন দাস শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। শিক্ষয়িত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। বিধায়ক পদ্ম হাজরিকা ও কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ। শিক্ষয়িত্রীদের সুরক্ষিত স্থানে নিয়োগের দাবি জানান তাঁরাশিক্ষয়িত্ৰীরা তিন বছর পরও নিরাপদ স্থানে বদলি না হওয়ার কারণ তাঁরা জানতে চান। রাজ্য সরকার মাদ্রাসাকে অন্ধকার ভবিষ্যতে দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিধায়ক সাহাবুদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, শুধু অভিযোগ করা হয় মাদ্রাসাগুলি জেহাদির আস্তানা বলে। কিন্তু জেহাদির বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছেনা। যদি কোনও মাদ্রাসায় জেহাদি কার্যকলাপ চলছে তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক। অযথা বদনাম করার বিরোধিতা করেন তিনি। এআইইউডিএফের বিধায়ক আমিনুল ইসলাম শিক্ষামন্ত্রী উপস্থিত না-থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখন অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নেই। চৌকিদাররাই বিদ্যালয় চালাচ্ছে। বিধায়ক আব্দুর রহিমও মাদ্রাসার বিরুদ্ধে বিনা কারণে অভিযোগ উত্থাপন করার আর্জি জানান। মন্ত্রী পল্লব লোচন দাস বলেন, নিযুক্তি ও বদলি প্রক্রিয়া সরকারি নিয়ম মতেই চলছে। মাদ্রাসা ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সরকার দায়বদ্ধ বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বিধায়ক অজন্তা নেওগ মঙলবার বিধানসভায় অভিযোগ করেছিলেন যে এনআরসি নিয়ে সরকার দুমুখো নীতি গ্রহণ করেছে। এর জবাবে আজ মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারি বলেন, তাঁদের সরকারের একমাত্র কাম্য শুদ্ধ এনআরসি প্রস্তুত করাপনেরটা নথির ওপর ভিত্তি করে এনআরসি তৈরি হয়েছে। তাই সরকার এই পনেরটা নথিই রাখতে চায়। পাঁচটা নথি পুনর কাৰ্যকর করার দাবি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। আমরা জানতে চেয়েছি কেন পাঁচটা নথি বাদ দেওয়া হল। এক্ষেত্রে সরকারের স্থিতি স্পষ্ট, কোনও দ্বিচারিতা নেই। বিধানসভায় রাজ্যের জল পরিবহনের দুরবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন অগপর পবিন্দ্ৰ ডেকা। তাঁর প্রশ্নের পক্ষে অগপ বিধায়ক গুণীন দাস বলেন, গুয়াহাটি ও উত্তৰ গুয়াহাটির মধ্যে রোজ পঁচিশ হাজার যাত্ৰী জলপথে যাতায়াত করেন। এই যাত্রীদের জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই। মাত্র চারটি নৌক চলাচল করেআভ্যন্তরীণ জল পরিবহন বিভাগের কোনও পরিকাঠামো নেই ও ভগবানের ভরসায় বিভাগটি চলছে বলে মন্তব্য করেন স্বয়ং পরিবহন মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারিচল্লিশ বছরের পুরণো জরাজীর্ণ জাহাজগুলি আজও চলছে। এই বিভাগের একটাই লক্ষ্য, ঘাটের লেসি কে পেল? এছাড়া আর কোনও কাজ নেই। আমরা ডবল ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা চলতে দেব না। বিশ্ব ব্যাঙ্ক এক হাজার কোটি টাকার অনুমোদন দিয়েছে অত্যাধুনিক জল পরিবহণ ব্যবস্থা করার জন্যে। আমরা ক্রমান্বয়ে সে ব্যবস্থাগুলি করতে চলছি। দশ কোটি টাকা করে এক একটি অত্যাধুনিক জাহাজে ব্যবস্থা করা হবে। এই জাহাজগুলিতে দুশজন করে যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। মানকাচর-মাজুলিতেও এই জাহাজ দেওয়া হবে। রাজ্যের রাজভাষা অসমিয়া প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে সদনে অভিযোগ করেন এআইইউডিএফ বিধায়ক আমিনুল ইসলাম। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন অসমিয়া ভাষা সংকটের মুখে। ১৯৯১ সালে আদমসুমারিতে অসমিয়া ভাষীর সংখ্যা ছিল সাতান্ন শতাংশ। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশ। কাৰ্বি, বোড়োরাও নিজেদের মাতৃভাষা অসমিয়া বলে মানছে না। সর্বত্র ইংরাজির প্রচলন উদ্বেগজনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মন্ত্রী চন্দ্র মোহন পাটোয়ারি বলেন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় রাজভাষা প্রচলনের সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব জেলা ও মহকুমাতে রাজভাষা সেল গঠন করা হয়েছে। আগামী দুর্গোপূজার সময় সব পেণ্ডেলে অসমিয়া ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ গোস্বামী বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে বলেন, রাজভাষা অতি সংবেদনশীল বিষয়। শুধু অসমিয়া নয়, বাংলা, বোড়ো ইত্যাদি মাতৃ ভাষাতেও যে কেউ বক্তব্য রাখতে পারেন। বরাক, বিটিএডির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। তাই এমন কিছু বলা উচিত নয় যাতে ভুল বুজাবুজির সৃষ্টি না হয়। মন্ত্রী পল্লব লোচন দাস শেরমান আলির এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নির্মাণ শ্রমিকদের স্বার্থে আগের সরকার কিছুই করেনি। প্রায় দশ কোটি টাকা বাজেট ছিল। কিন্তু আবেদন পত্র ছাপানো হয়েছিল একুশ কোটি টাকারতখন শ্রম দফতরের দায়িত্বে ছিলেন তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী। সিএম ভিজিলেন্স সেল তদন্ত করে তদানীন্তন শ্রম কমিশনারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। নব্বই দিন এক নাগারে কাজ করলে একজন লোককে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হবে। রাজ্যের নির্মাণ শ্রমিকদের স্বার্থে সরকার বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বলেও তিনি জানান।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.