Header Ads

এনআরসি-র আতঙ্কে পুজোর আনন্দে ভাটা পড়েছে, পুজো আসছে কিন্তু বাঙালিদের মনে সেই আনন্দ নেই




রিংকি মজুমদার 

যে জাতির প্ৰধান উৎসব দুৰ্গাপুজো আজ সেই জাতিই গভীর সংকটের মুখোমুখি।এমনটাই মনে করছেন পৰ্যবেক্ষক মহল। অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি অথবা এনআরসি প্ৰক্ৰিয়ার জাতাকলে চাপা পড়ে যায় নি তো বাঙালির দুৰ্গোৎসবের  আনন্দ? বৰ্তমান পরিস্থিতিতে এই প্ৰশ্নই কিন্তু বারে বারে উঠে আসছে। বাঙালি সে হিন্দু হোক, কিংবা মুসলমান এবারের দুৰ্গাপুজো কি সকলের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে? তা নিয়ে অভিজ্ঞ মহলে  উঠছে বিভিন্ন প্ৰশ্ন।এনআরসি-র রাজনৈতিক চাপান উতোরে সবচেয়ে ক্ষতি হচ্ছে দিন মজুর, খেঁটে খাওয়া তৃণমূল পৰ্যায়ের মানুষগুলোর। রাতটা কোনওমতে কেটে গেলেও সকালে সন্তানদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে প্ৰতিদিন যাদের রীতিমতো হিমসিম খেতে হয় সেই সব মানুষগুলো অৰ্থ উপাৰ্জনের চিন্তা করবে না কি এনআরসির সেবাকেন্দ্ৰে গিয়ে লাইন দেবে? এই মানুষগুলোর শিক্ষাদীক্ষা নেই অন্যের বাড়িতে বাসন মেজে,ঝাড়ু মোছা করে, কাপড় ধুয়ে পরিবার প্ৰতিপালন হয় এদের। ৩০ থেকে ৪০ বছর আগের পরিচয় পত্ৰ কোথায় কি রয়েছে বন্যায় সব ভেসে গেছে । যে মানুষটার বৰ্তমানে বয়স ৫০  এবারে সে তাঁর বাবা-মায়ের শংসাপত্ৰ কোথা থেকে জোগাড় করবে? ১৯৪৬, ৬৫, ৬৬ সালের বংশবৃক্ষের নথিপত্ৰ কোথায় পাবে?  সমস্যা হয়েছে সেখানেই।বৰ্তমানে এই খেঁটে খাওয়া এই মানুষগুলোর চোখে একটাই আতঙ্ক। সেটা হল, এনআরসিতে নাম না এলে কি তাঁদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হবে? না ডিটে নশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে।  তাদের কি ভারতে থাকতে দেওয়া হবে না? এসব প্ৰশ্নের মধ্য দিয়েই এখন তাদের দিনরাত কাটছে। মহানগরীর কেন্দুগুড়ির বাসিন্দা পূরবী রায়। ফরেস্ট গেট এলাকায় অ্যাপাৰ্টমেন্টে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাসন মাজা, ঘর ঝাড়ু দেওয়া পরিচারিকার কাজ করে। উপযুক্ত নথিপত্ৰ নাথাকায় পূরবীর পরিবারের সদস্যদের একজনেরও এনআরসি র তালিকায় নাম ওঠেনি। ফলে চিন্তায় তার রাতের ঘুম উঠে গেছে। তাই দুৰ্গাপুজোর আনন্দ উপভোগ করতে পারছে না সে। গোটা অসমে এই রকম আরও কত পূরবী রয়েছে যাদের এনআরসি তালিকায়  নাম না ওঠায় রাতের ঘুম উঠে গেছে। মহানগরের লালগণেশের বাসিন্দা মনীন্দ্ৰ রায়ের পরিবারে তাঁর স্ত্ৰী বাদে আর কারও নাম তালিকায় ওঠেনি।শেষ পৰ্যন্ত হৃদরোগে আক্ৰান্ত হয়ে মারাই গেলেন তিনি। তাঁর বাড়িতে এবার দুৰ্গা পুজো নেই। জানা মতে শীল পদবীর পরিবারেও এবার পুজো নেই। বাবা কেন্দ্ৰীয় সরকারের অধীনে কাজ করতেন। ত্ৰিপুরার আদি বাসিন্দা তাঁর পত্নীর নামে গুয়াহাটি মহানগরে মেয়াদি পাট্টার জমি আছে । তাঁর নাম তালিকায় উঠেছিল। তাঁদের একপুত্ৰকে এনআরসি কৰ্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় বাবার নাম তো উঠবেই না, কারণ সে ত্ৰিপুরার বাসিন্দা এবং মায়ের নামটাও বাদ যাবে। কম্পিউটারে ভুলে মায়ের নামটা অন্তৰ্ভুক্ত হয়েছে। মহানগরের আরেক বাঙালি সংগঠক প্ৰাণতোষ রায়। তিনি সংঘ পরিবারের অন্যতম প্ৰতিষ্ঠাতা।  তাঁর নামও  এনআরসির তালিকায় নেই। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক শেখর দে-র নামও তালিকায় অন্তৰ্ভুক্ত হয়নি। নিম্ন অসমে হাজার হাজার বাঙালির এনআরসি তালিকায় নাম ওঠেনি। তাই, কি মানসিকতা নিয়ে  এই মানুষগুলো দুৰ্গাপুজোর আনন্দে গা ভাসাবেন? তাই এবার পুজোয় মা দুৰ্গা কি সকলের জন্য আনন্দ বয়ে নিয়ে আসবেন? এই একই প্ৰশ্ন উঠছে চারদিকে। এনআরসি উদ্ভুত অনিশ্চিত পরিস্থিতির প্ৰেক্ষিতে পুজোর কয়েকটা দিন বাকি থাকতে আজও বাঙালিদের মধ্যে কোনও উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না ।জমে ওঠেনি পুজোর বাজার। বিপৰ্যস্ত বাঙালিরা আজও বাজারমুখো হয়নি। কারণ তাঁদের সামনে এনআরসির  বিপদ অপেক্ষা করছে। তাঁরা বাংলাদেশে যাবে, না ডিটেনশন ক্যাম্পে? এই প্ৰশ্নের গভীরে ঘুরপাক খাচ্ছে আম বাঙালির ভবিষ্যৎ।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.