Header Ads

মনীন্দ্ৰ বাবু, কথা রাখতে পারলাম না, কিন্তু দেখা হল শশ্মানে


অমল গুপ্তঃ রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ ফোনটা এসেছিল– ‘গুপ্ত বাবু যদি শেষ দেখা করতে চান, তবে চলে আসুন।' পরে তার মেয়ে জুন জানালো ডাঃ শরদীন্দু বিশ্বাসের বাড়িতে বাবা মাথা ঘুড়ে পড়ে গিয়েছিলেন। দুঃখিত মনীন্দ্ৰ বাবু, আমি যেতে পারি নি, আজ শেষ দেখা হল ভূত নাথ শশ্মানে, চন্দন চৰ্চিত মুখ, চোখ দুটি বোঁঝা, তুলসী পাতায় ঢাকা, হয়তো বা কিছু বলতে চাইছেন¯ বরাক উপত্যকার আদি বাসিন্দা ৭০ দশকে গুয়াহাটি মহানগরে এসে এক ছাতা কোম্পানীতে কাজ শুরু করেন। তখন গুয়াহাটি মহানগরে বাংলা ভাষা বলা খুব ঝুঁকি ছিল, তার পরেই গুয়াহাটি মহানগর থেকে সৰ্বপ্ৰথম ‘দৈনিক যুগশঙ্খ' প্ৰকাশনা শুরু হয়। শুনেছি মনীন্দ্ৰ বাবু ছাতার মধ্যে লুকিয়ে দৈনিক যুগশঙ্খ বিতরণ করতেন। তিনি রাজ্যের বিশিষ্ট সাংবাদিকের তকমা পান নি, তবে দারিদ্ৰ পীড়িত আম জনতার সুখ-দুঃখের খবর তার কলমে উঠে আসতো সাবলীলভাবে। তিনি কবিতার ভাষায় মানুষের সুখ-দুঃখ যন্ত্ৰণাকে ফুটিয়ে তুলতেন। ‘স্বীকৃতি বিহীন' সাংবাদিক মনীন্দ্ৰ রায় জীবনে পেলেন না কিছুই দিয়ে গেলেন, উজার করে। বরাক উপত্যকার ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে তার ওতপ্ৰোত সম্পৰ্ক ছিল। জাতীয় নাগরিপঞ্জীতে তার পত্নী অবসর প্ৰাপ্ত শিক্ষিকা ঝৰ্ণা দেবীর নাম এলেও তার এবং তার ৩ কন্যার নাম আসে নি, ২ কন্যা তুন ও মুন গুয়াহাটিহাইকোৰ্টের আইনজীবি হওয়া সত্বেও এন আর সিতে নাম অন্তৰ্ভূক্ত হয় নি। তার পর থেকেই তিনি অবসাদে ভুগছিলেন। আমি আমার সম্পাদনায় ওয়েভ পোৰ্টাল ‘নয়া ঠাহর' এবং এক ছাপা মাধ্যমে খবরটি পরিবেশন করেছিলাম। মনীন্দ্ৰ বাবু সোমবার ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন ‘নব বাৰ্তা প্ৰসঙ্গ' পাওয়া যাবে কি না? আমি জানিয়েছিলাম কাগজটি এলেই আপনাকে জানাবো। কয়েক দিন আগে দিশপুর প্ৰেস ক্লাবে এসে ‘নয়া ঠাহর'-র পুজো সংখ্যার জন্য এক কবিতা নিয়ে এসেছিলেন। সেই কবিতার পৃষ্ঠা হাতে নিয়ে তার শেষ ছবি তুলেছিলাম। আজ শেষ দেখা হল ভূতনাথ শশ্মানে। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ছাড়া আমার আর কিছুই করারনেই। ভালো থাকুন মনীন্দ্ৰ বাবু, আপনার কথা রাখতে পারলাম না। রবিবারে গেলে হয়তো দেখা হত। আজও কিন্তু দেখা হল!


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.