Header Ads

ইমরানের শপথ, ২২ গজের ক্যাপ্টেন এখন পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী

সংবাদ সংস্থা

সংখ্যাটা সেই ২২। বাইশ গজের আঙিনা কাঁপিয়েছিলেন তিনি। নিজের রাজনৈতিক দল গঠনের বয়সও ২২। ঘটনাচক্রে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর সংখ্যাটাও ২২। ব্যাটে-বলে যে সাফল্য তুলে এনেছিলেন, পাকিস্তানের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই সাফল্য পাবেন কি? তিনি ইমরান খান। শনিবার দেশের ২২তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন তিনি। এ দিন পাক প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসেন শপথবাক্য পাঠ করান ইমরানকে। তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার নভজ্যোত সিংহ সিধু। এ ছাড়াও রয়েছেন প্রাক্তন পাক-ক্রিকেটার রামিজ রাজা এবং ওয়াসিম আক্রম। 

বাইশ গজের আঙিনা থেকে বেরিয়ে সরাসরি ঢুকে পড়েছিলেন রাজনীতির আঙিনায়। সালটা ১৯৯৬। তৈরি করলেন নিজের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ক্রিকেটের ময়দানে তাঁর আক্রমণাত্মক ভূমিকা বিশ্বের কারও অজানা নয়। তবে সম্পূর্ণ একটা ভিন্ন আঙিনায় ঢুকেও তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিটা কিন্তু উধাও হয়ে যায়নি। গত ২২ বছর ধরে তিল তিল করে নিজের পায়ের তলার মাটি শক্ত করেছেন। ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। যতটা বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছনোর লক্ষ্য নিয়ে। টানা বাইশ বছর ধরে নিরলস ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল অবশ্য শেষমেশ নিজের ঘরেই তুলে এনেছেন।

দেশকে সুনির্দিষ্ট পথে চালিত করা, দেশকে যাঁরা লুঠ করেছে তাঁদের বিচারের ব্যবস্থা করা— এমন বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন ‘কাপ্তান’। তবে তাঁর মাথায় ‘তাজ’ ওঠার পথটাও কিন্তু মসৃণ ছিল ছিল না। নির্বাচনের শুরু থেকেই আত্মবিশ্বাস ধরা পড়েছিল তাঁর গলায়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে আসে পিটিআই। শুক্রবারই পার্লামেন্টে হয়ে গিয়েছে আস্থা ভোট। ম্যাজিক ফিগার ছিল ১৭২। ছোট ছোট দলগুলিকে নিজের দলে টেনে নিয়ে ১৭৬ ভোট অর্জন করে সেই পরীক্ষাও পাশ করেছেন তিনি। যেখানে তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী শাহবাজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) পেয়েছে মাত্র ৯৬ ভোট। ইমরানের এই জয় কিন্তু পাকিস্তানের চিরাচরিত ‘প্রথা’কে ভেঙে দিয়েছে। কারণ এত দিন পর্যন্ত দেশের ক্ষমতা গিয়েছে হয় পিএমএল-এন-এর হাতে, অথবা বেনজির ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি(পিপিপি)-র হাতে। কিন্তু ইমরান ক্ষমতায় এসে সেই দীর্ঘ ‘প্রথা’ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছেন।

ইমরানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাকিস্তানে যাওয়ার পথে ওয়াঘা সীমান্তে নভজ্যোত সিংহ সিধু। ছবি: পিটিআই।
দেশের উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাপ্তান ক্ষমতায় এসেছেন ঠিকই। নির্বাচনে জেতার পরই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, প্রতিবেশী দেশ ভারত সম্পর্কে কী মনোভাব নিয়ে চলবেন তিনি? পূর্বসূরিদের পথকেই অনুসরণ করবেন না কি সে পথ থেকে সরে এসে অন্য ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। এমন প্রশ্ন উঠতে পারে, এটা সম্ভবত আঁচ করতে পেরেছিলেন ইমরান। তাঁর জয়ের পরই নরেন্দ্র মোদী অভিনন্দন জানান। দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি নিয়েও কথা হয়। সে সময়ই ইমরানকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ভারত এক পা এগোলে, পাকিস্তান দু’পা এগোবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, না আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস নেই। বহুরূপী পাকিস্তানকে এর আগেও দেখেছে ভারত। সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। কাশ্মীরে কী ভাবে পাকিস্তান প্রভাব বিস্তার করছে, জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে এ নিয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পাকিস্তানকে তুলোধোনা করেছে ভারত। ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে ভারত। কিন্তু তার পরেও পাকিস্তান বিশ্বের কাছে নিজেদের এমন ভাবে তুলে ধরতে চেয়েছে যে কাশ্মীরে বা ভারতে সন্ত্রাসবাদে তাঁদের কোনও ভূমিকাই নেই। কিন্তু ভারত বার বার তথ্য প্রমাণ দিয়েছে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়ে।

ইমরান ক্ষমতায় আসার পরে সেই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছে, পারবেন কি ‘কাপ্তান’ তাঁদের পূর্বসূরিদের খোলস থেকে নিজেকে বের করে আনতে? তা সময়ই বলবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.