Header Ads

প্ৰরোচনামূলক মন্তব্য করে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করবেন নাঃ মুখ্যমন্ত্ৰী মমতার মন্তব্য সম্পৰ্কে সৰ্বানন্দ সনোয়াল

এন আর সির কাজ সফল হওয়ায় রাজবাসীকে ধন্যবাদ

গুয়াহাটিঃ অসমে বহু প্ৰত্যাশিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর (এন আর সি) দ্বিতীয় খসড়া তালিকা প্ৰকাশ পেল। এই তালিকা থেকে ৪০ লক্ষ জ্জহাজার ৭০৭জনের নাম বাদ পড়েছে। মোট আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৩কোটি ২৯ লক্ষ ৯১ হাজার ৩৮৪জন। নাম আছে ২কোটি ৮৯লক্ষ ৮৩হাজার ৬৭৭ জনের। এই বৃহৎ সংখ্যক মানুষের সিংহভাগই হচ্ছে ধৰ্মীয় এবং ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষ এর মধ্যে কিছু হিন্দী, নেপালী এবং অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষের নাম আছে বলে বিভিন্ন সূত্ৰে জানা গেছে। গোৰ্খা ছাত্ৰ সন্থার সভাপতি প্ৰেম তামাং অভিযোগ করেছেন ১ লক্ষ নেপালী সম্প্ৰদায়ের মানুষের নাম বাদ পড়েছে। এই বৃহৎ সংখ্যক মানুষের নাম বাদ পড়ায় বরাক ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় মিশ্ৰ প্ৰতিক্ৰিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই আই ইউ ডি এফ প্ৰধান বদরুদ্দিন আজমল সুপ্ৰীমকোটকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেছেন, ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়াটা সহজ কথা নয়, প্ৰকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম বাদ পড়লে এ আই ইউ ডি এফ সাহায্য করবেন, অসমকে বিদেশীমুক্ত করতেই হবে। অপরদিকে এ আই ইউ ডি এফ-র সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এন আর সির কাজে কিছু ক্ষেত্ৰে আপত্তি জানিয়েছেন, বিতৰ্কিত বিজেপি বিধায়ক মন্তব্য করেছেন ১৯৫১ সালকে ভিত্তি করা হলে ১কোটি মানুষের নাম বাদ পরতো। তাই হওয়া উচিত ছিল মাত্ৰ ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ল। প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী প্ৰফুল্ল কুমার মহন্ত পুরো কৃতিত্ব সুপ্ৰীমকোৰ্টকে দিতে হবে, আমিও ৪০ লক্ষ বিদেশী থাকার কথা বলছিলাম। এই প্ৰতিক্ৰিয়ার ঝড় গিয়ে পৌছিয়েছে সংসদের ভিতরে এবং প্ৰতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও। আসু, কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতি, এপিডব্লিউ সহ রাজ্যের জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ায় সন্তোষ প্ৰকাশ করেছে। আসুর উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচাৰ্য বলেছেন, তাদের ধারণা ছিল প্ৰায় ৫০ লক্ষ বাংলাদেশীর নাম বাদ পড়বে। তবে সুপ্ৰীমকোৰ্টের প্ৰত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এই বৃহৎ কাজ হয়েছে, তাতেই তারা সন্তুষ্ট। আসাম পাব্লিক ওয়াৰ্কসের প্ৰধান অভিজিৎ শৰ্মা সুপ্ৰীমকোটের বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এবং এন আর সির কৰ্তৃপক্ষের কাজে প্ৰশংসা করে বলেছেন, রাজ্যের লুঙি, টুপি পড়া মানুষদের নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ হবে। এতদিন তাদের নিরবিছিন্নভাবে হেনস্থা করা হয়েছে, তাদের নামে চাঁদা তোলা হয়েছে, এবার চাঁদা তোলার সংস্কৃতিও বন্ধ হবে। রাজ্যের এন আর সি তালিকা প্ৰকাশের কয়েক ঘণ্টা খানিক বাদেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা বেনাৰ্জি তীব্ৰ ক্ষোভ প্ৰকাশ করে বলেছেন, বিজেপি সরকার এক কলমের খোঁচায় ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দিয়ে দিল তা অত্যন্ত অমানবিক কাজ হয়েছে। নতুন করে উদ্বাস্তু সৃষ্টি করা হল। অসমের মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল তড়িঘড়ি করে সাংবাদিক সন্মেলন ডেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্ৰীর মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, কোনও ধরণের প্ৰরোচনামূলক মন্তব্য দেওয়া উচিত হয় নি। স্বচ্ছপ্ৰক্ৰিয়া ও নিরপেক্ষভাবে খসড়া তালিকা প্ৰকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে কোনও প্ৰশ্ন উঠতে পারে না। তিনি পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঙুল তুলে বলেন, আমরা রাজ্যের হিন্দু-মুসলিম বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, ভাষাভাষির মানুষ সদ্বভাবের সঙ্গে ও শান্তিপূৰ্ণভাবে বসবাস করছি। কোনও প্ৰরোচনামূলক মন্তব্য করে পরিস্থিতিকে বিষিয়ে তোলা উচিত নয়, মনে রাখতে লাগবে দেশের সৰ্বোচ্চ আদালত সুপ্ৰীমকোৰ্টের নিৰ্দেশ ক্ৰমে এন আর সির কাজ হয়েছে। আমি বিভিন্ন ভাষাভাষি দল ও সংগঠনের সঙ্গে মত বিনিময় করে তাদের অভিমত নিয়েই এন আর সির কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, এতে কারও কোনও মতানৈক্য নেই, তাই অশান্তি পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত নয়। দাবি আপত্তি জানাবার যথেষ্ট সময় আছে উপযুক্ত নথিপত্ৰ দাখিল করে নাম অন্তভূক্তের সুযোগ দেওয়া হবে। এক জন ভারতীয়ের নামও তালিকাথেকে বাদ পড়বে না। তাই রাজ্যবাসীর কাছে আমার কাতর আবেদন শান্তি সম্প্ৰীতি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ করবেন না। কোনও সাম্প্ৰদায়িক মন্তব্য না করে সব ধরণের গুজব পরিহার করুন। সম্পূৰ্ণ গণতান্ত্ৰিক প্ৰক্ৰিয়ার মাধ্যমে এন আর সির কাজ হয়েছে। সেই গণতান্ত্ৰিক পরম্পরা মেনেই কেন্দ্ৰীয় সরকার, রাজ্য সরকার, সংবাদ মাধ্যম রাজ্যবাসী রাজ্যে বিদেশীমুক্ত নাগরিকপঞ্জী প্ৰস্তুতের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। নেতিবাচক কোনও মন্তব্য করে পরিস্থিতিকে অশান্ত করা উচিত নয়। বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেবের সাম্প্ৰদায়িক মন্তব্য সম্পৰ্কে মুখ্যমন্ত্ৰীকে স্মরণ করিয়ে দিলে মুখ্যমন্ত্ৰী শিলাদিত্যের নাম না করে বলেন, প্ৰরোচনামূলক মন্তব্য করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন। নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক প্ৰধান সাধন পুরকায়স্থ বলেন, ‘৪০লক্ষর বেশি মানুষের নাম কাটা পড়ল তার ফলে রাজ্যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বরাক থেকে প্ৰায় ৫লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।' তিনি বলেন, বরাক অবিভিক্ত ভারতের অংশ। সেই বরাকের সবাই খিলঞ্জীয় ভূমিপুত্ৰ। কংগ্ৰেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ আজকের দিনকে ইতিহাসে কালো অধ্যায় বলে বৰ্ণনা করেছেন। কংগ্ৰেস সাংসদ রিপুন বরা অভিযোগ করেছেন, বিশেষ জনগোষ্ঠীর মানুষকেই এন আর সি তালিকা থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। কৃষক মুক্তি সংগ্ৰাম সমিতির প্ৰধান অখিল গগৈ অভিযোগ করেছেন, বিজেপি সরকার প্ৰথম থেকেই এন আর সির বিরোধিতা করেছে। কিন্তু সুপ্ৰীমকোৰ্টের চেষ্টার জন্য এন আর সির নবায়নের কাজ সম্পূৰ্ণ হয়েছে। রেজিষ্টার জেনারাল অফ ইণ্ডিয়ার প্ৰধান কে শৈলেশ এবং এন আর সি সমন্বয়ক প্ৰতীক হাজেলা এবং কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰালয়ের যুগ্ম সচিব সত্যেন্দ্ৰ গাৰ্গ বারবার প্ৰতিশ্ৰুতি দিয়েছেন দাবি আপত্তির মাধ্যমে নাম না থাকা ব্যক্তিরা নাম অন্তভূক্ত করতে পারবেন। এখনও স্পষ্ট হয়নি কিন্তু ২ লক্ষ ৪৮ হাজার মানুষের নাম ‘হোল্ড' করে রাখা হবে, সম্ভবত তারা ‘ডি' ভোটার হিসাবে চিহিত। প্ৰশ্ন উঠছে তারা দাবি আপত্তি জানাতে পারবে কি? ট্ৰাইব্যুনালগুলিতে বিচারাধীন ব্যক্তিদের পরিবারের মানুষদের নামও বাদ পড়ছে। বাদ পরা ৪০ লক্ষ ৭হাজার মানুষ আগামী পঞ্চায়েত নিৰ্বাচনে ভোট দিতে পারবে তো? এন আর সি কৰ্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে দিয়েছে ২০১৫ সালে যারা এন আর সির জন্য আবেদন করে নি তাদের আবেদন আর গ্ৰহণ করা হবে না। সেই মানুষগুলি কোথায় যাবে? বাদ পরা এই ৪০ লক্ষ মানুষগুলির মধ্যে ধৰ্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষ সিংহভাগ। বিভিন্ন সূত্ৰ দাবি করেছে তাদের সংখ্যা প্ৰায় ২৬-২৭ লক্ষ। এন আর সির দ্বিতীয় তথা শেষ খসড়া তালিকা প্ৰকাশ পেল আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্ৰকাশ পাবে, তখনই প্ৰকৃতাৰ্থে বিদেশীর সংখ্যা কত? তবে নানা প্ৰশ্ন, নানা মতের সৃষ্টি হল এই এন আর সি।


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.